Breaking News

চোখে জল আসার মতো এক পাখির বাস্তব করুণ কাহিনী। যার অনেক কিছুই মিলে যাবে আপনার জীবনের সাথে। রইলো পাখিটির সম্পূর্ণ জিবন কাহিনী।

নিজস্ব প্রতিবেদন:বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো ডাহুক-ডাহুকিকে নিয়ে ভালোবাসার গল্প প্রচলিত আছে গ্রামে। যখন ডাহুক তার সঙ্গীর খোঁজ না পায়, দিনরাত ডাকতে ডাকতে গলায় রক্ত উঠে একসময় মারা যায়! ডাহুক হারিয়ে গেলে ডাহুকি দিনরাত পাগলের মতো ডাকাডাকি করতে থাকে, যা বর্ষাকালে বেশি শোনা যায়। কেউ কেউ বলে, ডাকতে ডাকতে ওদের গলা থেকে রক্তের ফোঁটা ওদের ডিমের ওপর পড়লেই তবে ডিম ফোটে।

আবার কেউ বলে, মানুষকে ওরা ডাকাডাকি করে বিপদ সংকেত জানায়। আসলে এসবের কিছুই নয়, ওদের প্রজনন সময় ঘনিয়ে এলে সঙ্গী পাখিকে আকৃষ্ট করতে এমন আর্তনাদ করে ডাকতে থাকে। এদেরকে ‘ডাইক’, ‘পান পায়রা’, ‘ধলাবুক ডাহুক’ বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এরা পোষ মানে। গ্রামের শিকারিরা পোষা ডাহুক পাখি দিয়ে এ প্রজাতির বুনোপাখি শিকার করে।মাঝারি আকৃতির এই পাখিটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর।

লম্বায় ৩২-৩৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে অনেকটা একই রকম। ডাহুকের লেজ ছোট, লেজের নিচের অংশ লালচে আভা সমৃদ্ধ। লেজটা অধিকাংশ সময় খাড়া থাকে।হাঁটার সময় লেজটাকে নাচিয়ে হাঁটে। পা লম্বা, পায়ের নখগুলো লম্বা লম্বা—ফলে পদ্ম ও শাপলা পাতায় দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এবং কচুরিপানার ওপর ছোটাছুটি করে। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরি-কালো। মাথা, মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা।

ঠোঁট হলুদ রঙের, ঠোঁটের ওপরে লাল রঙের ছোট্ট দাগ আছে। তবে ডাহুকের বাচ্চারা সবসময় কালো রঙের হয়।পাখিটির জীবনে ছিল অনেক কষ্টের। তার জীবনে অন্যতম একটা কষ্ট ছিল সে কোনদিন পাখির বাচ্চার মা হতে পারে নি।সে যেখানে ডিম দিত হয় ডিমগুলো কোন কারনে নষ্ট হয়ে যেত,না হয় অন্য পশু পাখি খেয়ে ফেলতো। তাই এবার অনেক আশা করে একটি গোপণ পাথরের কোঠরে বাসা বেধে চারটি ডিম দিয়েছেন।

এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর ডিমগুলো ফেটে চারখানা ছানা বের হলো।তার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। পরুষ পাখিটি বাহির থেকে ছানাগুলোর জন্য বিভিন্ন পোকামাকড় মেরে নিয়ে আসে। এভাবে দিন যায় মাস যায় আস্তে আস্তে ছানাগুলো বড় হতে শুরু করলো।ডানা বড় হতে শুরু করল।ছানা বলে একদিন চাপ দিতে পারো চেষ্টা করতেছে।মা পাখি খুবই খুশি তার ছানাদের পেয়ে।

মাস খানিক পর তার ছানাগুলোকে নিয়ে সেখান থেকে উড়ে চলে যায় দূরে কোন এক জায়গায়।তার জীবনে চলে আসে সুখ শান্তি।এরকমভাবে দিন কাটার পর হঠাৎ করে চারটি পাখি কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে।কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না। তাইতো তার জীবন আবারও চলে আসে দুঃখ কষ্ট হতাশা। কিন্তু পাখিটি ভেঙ্গে পড়ে নি একটুও। সে তার মনবল কে শক্ত করল সে কোন একদিন তারা ছানাদেরকে খুঁজে পাবে।

ঠিক এভাবে কয়েক মাস যাওয়ার পর একদিন তার তিনটি ছানাকে খুঁজে পেল। এভাবেই একদিন তার জীবনে আবারও সুখ চলে আসলো। তাইতো চলার ক্ষেত্রে দুঃখ কষ্ট আসতেই পারে মনোবলকে না ভেঙ্গে দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত।ডাহুক পাখির প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা, শ্যাওলা, ধান ইত্যাদি। পোষা ডাহুক চাল, ভাত খায়।

অনেক সময় খাবারের খোঁজে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। বাসা বাঁধে জলার ধারে ঝোপে কিংবা বাঁশঝাড়ে, তবে পানি এদের প্রধান আশ্রয়। ডাহুক খুব সতর্ক পাখি, আত্মগোপনে পারদর্শী। পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল, নদীর গোপন লুকানো জায়গা এদের খুব প্রিয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজননকাল। ৬-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকি উভয়েই ডিমে তা দেয়।

ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন।বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ডাহুক দেখা যায়। নির্দয় শিকারিদের অত্যাচার আর বসবাসের জায়গার অভাবে প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। আইইউসিএন ডাহুককে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষিত।

Check Also

এক মাছের পেট থেকে আট কেজি ডিম বের হলো, ভিডিও তুমুল ভাইরাল

মাছের ডিম দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রন্ধনশৈলীতে নানা ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। সমুদ্রজাত মাছের ডিম। …