বঙ্গ টেলিভিশন জগতের একজন অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেন ‘পল্লবী শর্মা’ (Pallavi Sharma)। বাংলা টেলিভিশনের একাধিক ধারাবাহিকে অভিনেত্রী কাজ করলেও তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন ‘কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে। আর এই ধারাবাহিকে তাঁর ‘জবা’ চরিত্রটি এখনো সকলের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু বর্তমানে অভিনেত্রীর কেরিয়ার যেমনটা সাজানো-গোছানো আদতে সবসময় সেরকমটা ছিল না। এক সময় জীবন যুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে।
সম্প্রতি নিজের সেই জীবন যুদ্ধের কাহিনী তিনি তুলে ধরলেন ‘জোশ Talk’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে। ইউটিউবের এই চ্যানেলটি মূলত সমস্ত মানুষের জীবন সংগ্রামের কাহিনী সকলের মাঝে তুলে ধরেন। ঠিক সেই কারণেই অভিনেত্রীকেও ডাকা হয় ‘জোশ Talk’-এর মঞ্চে। আর সেখান থেকেই তিনি সকলকে জানান নিজের জীবন সংগ্রামের কাহিনী। জোশ Talk এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী প্রথমেই ধন্যবাদ জানান তাঁকে সেখানে ডাকার জন্য। এরপর তিনি নিজের জীবনের গল্প বলতে শুরু করেন।
তিনি জানান তিনি একটি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। বাবা, মা ও দাদাকে তাঁর ছোট্ট পরিবার। আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতোই তাদেরও সাধারণভাবেই চলছিল জীবন। কিন্তু হঠাৎই তাঁদের জীবনে ঘটে ছন্দপতন। ক্লাস থ্রিতে পড়াকালীন অভিনেত্রী জানতে পারেন তাঁর মা ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। এরপর অভিনেত্রীর বাবা ও দাদা তাঁর মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যান চেন্নাইতে ও অভিনেত্রীকে রেখে যান পাশের বাড়িতে এক পিসির কাছে। পল্লবী জানান সেই যে তাঁর মা গেছে আর ফেরেনি।
চিকিৎসা সূত্রে চেন্নাই থেকে মুম্বাইতে স্থানান্তর করা হয় পল্লবীর মাকে। এরপর অভিনেত্রী যখন ক্লাস ফাইভে পড়েন তখন তাঁর মা মারা যান। এরপর শুরু হয় অভিনেত্রীর জীবনের একটি নতুন অধ্যায়। পল্লবী এরপর বলেন, যে পিসির কাছে তিনি থাকতেন তিনি কোনোভাবে ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত ছিলেন। একবার একটি পার্টিতে অভিনেত্রী যান ও সেখানে তাঁর সাথে আলাপ হয় এক ডিরেক্টরের। এরপর সেই ডিরেক্টরই অভিনেত্রীকে কাজের অফার দেন সানন্দা টিভিতে সম্প্রচারিত ‘নদের নিমাই’ নামক একটি ধারাবাহিকে।
সেখানে মাত্র ১৫ দিনের কন্ট্রাক্টে তিনি কাজ করেন। যদিও ১৫ দিনের কন্ট্রাক্ট থাকলেও তিনি সেখানে কাজ করেছিলেন প্রায় ৩ মাস। এরপর অভিনেত্রী অভিনয় জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে পড়াশোনায় মন দেন। অভিনেত্রী চেয়েছিলেন প্রথমে নিজের পড়াশোনা শেষ করতে। এভাবে কিছু বছর চলার পর আবার একটি বিশাল বড়ো ধাক্কা সামলাতে হয় অভিনেত্রীকে। আইসিএসসি (ICSC)-এর বোর্ড পরীক্ষার প্রথম দিন সকাল সাতটায় খবর আসে যে অভিনেত্রীর বাবা মারা গিয়েছে।
সেদিন সকলে অভিনেত্রীকে পরীক্ষা দিতে যেতে মানা করলেও তিনি পরীক্ষা দিতে যান। তিনি পরীক্ষা দিয়ে ফিরলে বাড়িতে তাঁর বাবার বডি আনা হয়। বাবা মারা যাবার পর তাঁর কিছু আত্মীয় স্বজন চেয়েছিলেন অভিনেত্রীর বিয়ে দিয়ে দিতে। কিন্তু তখনই কালার্স বাংলা থেকে ‘দুই পৃথিবী’ নামক একটি ধারাবাহিকের কাজের অফার আসে পল্লবীর। আর এরপর থেকেই শুরু হয় অভিনেত্রীর কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট। এরপর একের পর এক ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় অভিনেত্রীকে। পল্লবী চান তাঁকে একজন সংগ্রামী হিসেবে সমস্ত মানুষ চিনুক।